আগামী নির্বাচনে যদি ১০টি মার্ডারও হয় মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা সাবেক এমপির

১২ নভেম্বর ২০২১, ০৭:০৬ পিএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৭ এএম


আগামী নির্বাচনে যদি ১০টি মার্ডারও হয় মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা সাবেক এমপির
বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সামনে নির্বাচন আসবে, যদি সেই নির্বাচনে ১০টি মার্ডারও হয়, আমি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা মাঠ থেকে সরবো না। আর আপনারা কেন্দ্র ছাড়বেন না, না, না, যতকিছু হউক না কেন। প্রশাসনের লোক বলেন, দলীয়করণ বলেন যাই কিছু হউক না কেন সবকিছু কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার পক্ষে মেইনটেইন করা সম্ভব। মহিলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগসহ উপস্থিত সকলকে কেন্দ্র না ছাড়ার আহবান করেন শিবপুরের সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তাঁর এমন বক্তব্যের এক পর্যায়ে মঞ্চে উপস্থিত জেলা যুবলীগ সভাপতি বিজয় গোস্বামী দাড়িয়ে সিরাজুল ইসলাম মোল্লার কানে কিছু একটা বলার পর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।

এমন বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। উপজেলা যুবলীগের আয়োজনে বৃহস্পতিবার (১১নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিবপুরের ইটাখোলা গোল চত্বরে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন বক্তব্য প্রদান করেন। 

২০১৪ সালে হাঁস প্রতিকে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হিসেবে বিজয়ী সাবেক এই এমপি বক্তব্যে আরও বলেন, আমি সাংসদ থাকাকালীন শিবপুরে কি উন্নয়ন হয়েছে, আর বর্তমানে কি উন্নয়ন হচ্ছে আপনারা তা দেখছেন। ইটাখোলা-সিএন্ডবি, শিবপুর-দুলালপুর, কামরাব রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারতলা ভবন এবং উপজেলা প্রশাসন ভবন, নদী খনন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আমার মাধ্যমেই হয়েছে। বাংলাদেশের ১৪টি আর্দশ উপজেলার মধ্যে শিবপুর উপজেলার নাম আমি অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম।

আগামী নির্বাচনে যদি দশটি মার্ডারও হয় মাঠ না ছাড়ার ঘোষণার এমন বক্তবের ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নরসিংদী ও শিবপুরের রাজনীতির অঙ্গনে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। অনেকে এমন বক্তব্যকে উস্কানি হিসেবে দেখছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান বলেন, শিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ২০১৪ এবং ১৮ সালে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। তাছাড়া ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগের সাথে সমন্বয় করে কাজ না করায় ২০১৮ সালে নৌকার মনোনয়ন পাননি। পরপর দুইবার নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করায় উনি বুঝতে পেরেছেন আওয়ামীলীগ থেকে কখনো মনোনয়ন পাবেন নাG তাই আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার অভিপ্রায়ে উনার কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে উস্কানীমূলক এসব বক্তব্যে প্রদান করেছেন।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূইয়া বলেন, সিরাজ মোল্লা সবসময়ই আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। আগামী নির্বাচনে কালোটাকার বিনিময়ে আবারো আওয়ামীলীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হিসেবেই এই ঔদ্ধত্যপুর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। আমি উনার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাংসদ জহিরুল হক ভুইয়া মোহন বলেন, সাবেক এমপির বক্তব্যটি আমি অনলাইনে শুনেছি। আগামী দিনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবেন যুবলীগের অনুষ্ঠানে হত্যার হুমকি দিয়ে এ ধরনের বক্তব্য একজন সাবেক এমপির হতে পারে? এটার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এই বক্তব্যের দায়ভার তাকেই নিতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয়ভাবে বিষয়টি হয়তবা নজরে এসেছে। যদিও তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদেও নেই।

এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, একটি মহল নির্বাচন এলে সহিংসতা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেন। সামনের নির্বাচনে যদি  ১০টি মার্ডারও হয় তাহলে কর্মী সমর্থকরা যেন মাঠ ছেড়ে না যায় সেই আহবান করেছি। যাতে কেউ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারেন নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার জন্যই আমার এমন বক্তব্য দেয়া। আমি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। কেউ যদি মার্ডার করার রাজনীতি করতে আসেন এবং বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তাদের হুশিয়ারি করার জন্যই এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য,  ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী জহিরুল হক মোহনের সাথে সিংহ প্রতিক নিয়ে দলের বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন কুন্দারপাড়া এলাকার একটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতিকের এজেন্ট মিলন মিয়া হত্যার শিকার হন। এই হত্যার ঘটনায় ২ জানুয়ারি এজেন্ট মিলনের স্ত্রী পারভীন বেগম বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও তাঁর ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুর আলম মোল্লা তাজুলসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে ও আরো ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও তাঁর ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুর আলম মোল্লা তাজুল। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।



এই বিভাগের আরও