অনেক কিছু থেকেও নি:স্ব অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরা শিবপুরের এক প্রবাসী

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম


অনেক কিছু থেকেও নি:স্ব অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরা শিবপুরের এক প্রবাসী

শেখ মানিক:
শত কষ্টের মাঝেও মা তার সন্তানকে আগলে রাখেন পরম মমতায়। ঝড়-বৃষ্টি, রোগ-ব্যধি যা-ই হোক না কোনো, সন্তানের পাশে ছায়ার মতো থাকেন মা। তেমনিই এক মা ৬৫ বছর বয়সী আফরোজা বেগম। বয়সের কাছে শরীর হার মানলেও ছেলের প্রতি একটু মমতা কমেনি মায়ের। নিজেই ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তারপরও সৌদি প্রবাস ফেরত ছেলে মিলন মিয়ার এই সময়ে তিনিই একমাত্র ভরসা।


গত ৪ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের বাড়ৈগাও গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে মো: মিলন মিয়া (৫০) এর বাড়ীতে কথা হয় এই মা-ছেলের সঙ্গে। এলাকার কয়েকজন মুরুব্বী খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ৭ মাস আগে সৌদি আরবে প্যারালাইসিস হয়ে হাত পা অবশ হয়ে যায় মিলন মিয়ার। দেশে ফিরে কিছুদিন চিকিৎসা দেওয়া হলে হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী ইয়াসমিন।


অসুস্থ সৌদি ফেরত মিলন মিয়া জানান, আমি প্রায় ২৫ বছর সৌদিতে ১৪/১৫ ঘন্টা কাজ করেছি, জীবনের শেষ সময় একটু সুখে শান্তিতে থাকার জন্য। বিয়ে করেছি ১৯ বছর, এক সন্তান আছে আমাদের। বিদেশ থাকাকালীন আমার পাঠানো টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করলে স্ত্রীর নামে লিখে নেয়। আমার ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোন কিছু বলিনি। এবার অসুস্থ হয়ে দেশে আসার পরে কৌশলে আমার সেবাযত্ন, উন্নত চিকিৎসার কথা বলে জমিসহ প্রায় কোটি টাকার বাড়ী লিখে নিয়েছে। সবকিছু লিখে নেয়ার পর অমানবিক নির্যাতন চালায় আমার ওপর। ঠিক মতন খেতে না দেয়া, ঔষুধ না দেয়াসহ আমার মা, ভাই ও বোনেরা আমার সেবা-যত্ন করতে আসলে তাদেরকে আসতে দেয়া হয় না।

তিনি বলেন, আমি স্ত্রীর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। ধুঁকে ধুঁকে মরতে চাই না। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করেন আমার মা। অথচ বিদেশে থাকার সময় আমার বউয়ের কথায় মা, বাবা, ভাই, বোন আত্মীয় স্বজনদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমার অতি কষ্টের টাকায় নির্মিত এই বাড়িতে আমি আর থাকতে চাই না। আমি আমার মায়ের কাছে থাকতে চাই, আমাকে বাঁচান। আমার ভাই স্কুল শিক্ষক বকুল আমার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে আসার কারণে তার বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এখন সে মামলার ভয়ে বাড়ীতে থাকে না।

মিলনের বাবা চাঁন মিয়া বলেন, আমার ছেলেকে আপনারা এই যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্ত করে দিয়ে যান। তাকে ঠিক মত খাবার ও চিকিৎসা দেওয়া হয় না। আমি তার চিকিৎসা করাবো। তার এই অবস্থা দেখতে কষ্ট লাগে।

এ বিষয়ে তার স্ত্রী ইয়াসমিন জানান, ডাক্তার বলছে এ রোগের আর কোন চিকিৎসা নেই, তাই বাড়িতে নিয়ে আসছি। জায়গা সম্পত্তি উনি নিজের ইচ্ছায় লিখে দিয়েছেন, আমি জোর করে নেইনি।

এ বিষয়ে চক্রধা ইউপি চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত বেনজির আহমেদ জানান, অসুস্থ প্রবাসী ফেরত মিলন মিয়া তার মা বাবার কাছে থাকতে চায়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তার বাবা-মার কাছে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।



এই বিভাগের আরও