মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী

২৭ আগস্ট ২০১৯, ০১:০৪ পিএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১১:১৮ এএম


মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, “যার রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেনো সবার একটা জায়গায় এক হওয়া দরকার, সেটা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, রাষ্ট্রের বিরোধী দলেও থাকবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আমরা চাই স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা যেনো কোনভাবে বাংলাদেশ প্রশ্রয় না পায়। আমরা সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবো। আমরা চাই বাংলাদেশ শান্তি, সৌহার্দ্যের, সহাবস্থানের একটা রাষ্ট্র হিসেবে থাকুক। এখানে অপরাধ হবে না, কেউ অপরাধ করলে অপরাধীর বিচার হবে। কোন অপরাধীকে দায়মুক্তি দেয়া হবে না, প্রটেকশন দেয়া হবে না”।

সোমবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্রাঙ্গনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের অনেকগুলো বড় রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তার অভ্যুদয় অনেকে মেনে নিতে পারেনি। তাই ৭১ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত অনেক বড় বড় রাষ্ট্র এ ভূখন্ডের স্বাধীনতাকে  গ্রহণ করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অনেক কিছু বদলে গেলো। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ হয়ে গেলো, ‘বাংলাদেশ বেতার’ ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হয়ে গেলো, ঢাকা এয়ারপোর্টের গেটে ‘স্বাগতম’ সম্ভাষণ হয়ে গেলো ‘আহলান সাহলান’। পকিস্তানি পাসপোর্টধারী গোলাম আযমকে বাংলাদেশে পাকিস্তানের পাসপোর্টসহ আসতে দেয়া হলো। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদকে ক্ষত-বিক্ষত করে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া হলো। বেনামে জামায়েত ইসলামকে এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া হলো। শাহ আজিজ, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মাওলানা আব্দুল মান্নান, জয়পুরহাটের আব্দুল আলীম, খান এ সবুরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা হলো। যারা বাংলাদেশ চাননি এবং লুকিয়ে ছিলেন তারা বেরিয়ে আসার সুযোগ পেলেন। যারা দেশের বাইরে ছিলেন তাদেরকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়া হলো। গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হলো”।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন সত্তা নিয়ে জেগে উঠা একটি রাষ্ট্রকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাবধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিলো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনীরা চেয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে হত্যা করতে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে একুশ বছর রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন”।

তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদেরদের মতো ব্যক্তিদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্বে শহিদের রক্তখচিত পতাকাকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে দিলেন। এভাবে জিয়াউর রহমান থেকে খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশের অর্জিত স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া হয়েছিলো”।

মন্ত্রী আরো বলেন, “এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বাংলাদেশ এনে সংসদে আসার সুযোগ করে দিলেন। জাতির পিতাকে খুন করার পরে খন্দকার মোস্তাক ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারী করলেন। জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। জিয়াউর রহমান খুনীদেরকে গ্রীন সিগন্যাল দিলেন খুন করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত করলেন জিয়াউর রহমান।

ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো যোগ করেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত জিয়াউর রহমানও অনাকাক্সিক্ষত হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া স্বামী হত্যাকারীদের বিচার করলেন না। খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমানও তার বাবার খুনীদের বের করে বিচারের পথ উন্মুক্ত করলেন না। অপরদিকে শেখ হাসিনা ৩৪ বছর অপেক্ষা করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে বাবার খুনীদের বিচার করে তাদের দর্প চূর্ণ করেছেন। সামরিক শাসকরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডসহ অন্যান্য হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আজ সে জায়গা থেকে আমরা ফিরে এসেছি”।

মন্ত্রী বলেন, “১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট একইসূত্রে গ্রোথিত। ৭১ এ যারা বিজয়ী হতে পারেনি তারা ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সাময়িক বিজয়ী হয়েছিলো। ১৫ আগস্টের পর আমরা যখন ঘুরে দাঁড়ালাম তখন তারা ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটালো। ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট এগুলো ইতিহাসের পরাজিত শক্তিদের বারবার অপচেষ্টার একেকটা স্টেপ।

৭৫ এর খুনীদের নতুন প্রজন্ম যেনো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সেজন্য বাঙালি জাতিকে জাগ্রত হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি ও আদর্শের উত্তরসূরি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছেন”।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ রাশিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আখতার হোসেন, রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাহাদাত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও