ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে : রাঙ্গামাটি
১৪ জুলাই ২০১৯, ০৪:১৬ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪১ এএম
আমার যত ঘুরাঘুরি : রাঙ্গামাটি
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ--
আমার মন ভোলায় রে--।
আরন্যক। রিসোর্টের নাম। নামটাই আমায় অনেক টানে। কারন আরন্যক '-শব্দটার মধ্যেই আমি অনেক কিছু পাই।আমি প্রথম লেঃ কমান্ডার হাসান ভাইয়ের ছবিতে দেখি। (হাসান ভাই আমাকে ইবনে বতুতা ডাকেন)ছবি দেখেই মুগ্ধ হই। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন। তাই চেষ্টা চলছিল কবে যেতে পারি।
অবশেষে সুযোগ এলো গত মে'মাসে। এবার মে মাসে ছিল রোজা। রোজা ? তাতে কি?খোদার সৃষ্টি দেখাটাও একটা ইবাদাত। সিদ্ধান্ত নিলাম রোজার মধ্যেই ঘুরবো।সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা হাসান ভাইকে দিয়ে বুকিং দিয়ে ফেললাম মে মাসের ২১ -২২ তারিখে।
রাঙ্গামাটি অনেকবারই গিয়েছি। কিন্তু আরন্যকে এই প্রথম যাব।অনুভূতিই আলাদা। এবারেও দুই পরিবার। আমরা আর বরের কলিগ কাজল ভাইয়ের পরিবার। সদস্য সংখ্যা ৮।খুব সকালে আমরা রওনা হলাম চিটাগাং থেকে। সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলা সবুজ পাহাড়ি পথ বেয়ে অবশেষে আমরা পৌঁছে গেলাম আরন্যকে। হায় আল্লাহ!এখানে এসেই পেয়ে গেলাম বৃষ্টি। তুমুল বৃষ্টি। আহারে!অরন্যে আসবো আর বৃষ্টি হবেনা তাই কি হয়? আসলে আমরা হলাম গিয়ে বৃষ্টি রাশি। যদি শীতকালে ঘুরতে বের হই তখনও মনে হয় বৃষ্টি হবে।
আরন্যকের কাজ এখনো কমপ্লিট হয়নি। কাজ চলছে। তার মধ্যেই বৃষ্টিতে ভিজতে নেমে পড়লাম। কি মজা!কি মজা! -বৃস্টি পড়ে টাপুরটুপুর নদে এলো বান।-আর আমাদের মনে এলো আনন্দ অফুরান।। বৃষ্টি মাথায় সুইমিংপুলে ঝাপাঝাপি করা যে কত আনন্দের সেটা যে না করেছে সে বুঝবেনা। ওয়াটার পার্ক মূল এরিয়া থেকে একটু দূরে। বর্ষাকালে পানি ভর্তি থাকে বিল। তখন তারা বোটে করে নিয়ে যায়।কিন্তু আমাদের জন্য সে সুযোগ ছিলনা। কারন লেকে পানি জমেনি।আমাদের মন খারাপ হয়ে গেল। কি করবো ভাবছি। এমন সময় আমার বর দেখি ছেলের হাত ধরে হাটতে শুরু করে দিল।ভাবখানা এমন যেন-তোমরা এলে আসো না এলে আমরাই যাব।অগত্যা কি আর করা।
আমরাও হাটা ধরলাম। জনমানবহীন এক ওয়াটার পার্কের দিকে।যাচ্ছিতো যাচ্ছি,যাচ্ছিতো যাচ্ছি।সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে। দুই হাত লম্বা ঘাস। কোথাও উঁচু কোথাও নীচু। কোথাও পানি কোথাও কাদা।কোথাও কাদা এত বেশী যে কোমর পর্যন্ত দেবে যায়।বাচ্চারা একটা ঢুকে আর তাকে টেনে বের করতে করতে আরেকটা দেবে যাচ্ছে কাদার ভেতরে। সে যে কি অবস্থা। আরন্যকের নিকুচি করি।মনে মনে ভাবছি সেনাবাহিনীর বেটারা করে কি? একটা পথ বা সেতু তো তৈরী করতে পারতো। আমি হাটায় স্লো বলে নূপুর ভাবি আর আমি ছিলাম অনেক পেছনে। আর তাই বেচে গেলাম। সামনে দুই অফিসারের নাকানিচুাবানী দেখে দুঃখের মধ্যে হেসে উঠলাম।সবগুলোর স্লিপার কাদার এত নীচে চলে গেছে যে আর খুঁজে পায়নি। তাদের জুতা খুজা দেখে মনে হচ্ছিলো তারা যেন মাছ ধরতেছে। এমন সময় অনেক দূরে ওয়াটার পার্কের পাশ থেকে একটা ছেলে আমাদের ঢেকে বল্লো -আপনারা ভুল দিকে এসেছেন। লে হালুয়া!বলে কি? অবশেষে আমি আর ভাবি স্বঠিক পথে গেলাম।না হলে আমাদের যে কি হতো। কারন দলে আমরাই ছিলাম বেশি ওজনের।।
প্রায় তিনঘণ্টা আমরা এখানে খুব মজা করলাম বৃস্টি আর পুলের মাঝে ঝাপাঝাপি করে।আবার সেই প্যাক কাদা মাঠ পেরিয়ে ফেরার পালা।
পরেরদিন কাজল ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন আমরা রাংগামাটি থেকে কাপ্তাইয়ের ভেতর দিয়ে যে রাস্তা হয়েছে সে পথ দিয়ে যাব। আনন্দে আমি নেচে উঠলাম। কারন গত সপ্তাহেই আমরা কাপ্তাই ছিলাম হাসান ভাইয়ের নেভাল একাডেমিতে। তখনই উনি আমাদের প্রথম এ পথে নিয়ে এসেছিলেন। এত সুন্দর এত সুন্দর! চারদিকে শুধু সবুজ সবুজ আর সবুজ। পথের পাশ দিয়ে বয়ে চলা একটা পাহাড়ি নদী আছে যেটা না দেখলে অনেককিছুই দেখা বাদ থেকে যায়।মাত্র একসপ্তাহ আগে এ পথ ধরে গেলেও আমার কাছে কিন্তু পুরনো লাগেনি।
আমরা গাড়ী ভর্তি করে আবারও পাহাড়ীদের কাছ থেকে লাউ,কুমড়ো,লিচু, পেপে,কাকরোল,কলা,লেবু কিনলাম।এটাও আমার একটা নেশা।বর বিরক্ত হয় অনেক। আমি বলি এতেই আমার আনন্দ। এ আনন্দটা করতে দাও।এ পথটা এখনো ততটা নিরাপদ নয়। তাই কেউ যেতে চাইলে সাবধানে যাবেন।কিন্তু যাবেন।
কাপ্তাই আমি অনেকবারই গিয়েছি।কিন্তু সেটা কাপ্তাই লেক পর্যন্ত। নেভাল একাডেমির ভেতর গিয়ে আমার মনে হলো এ-তো ভূস্বর্গ। আমি এতোদিন কেন আসিনি? লেক এদিকে এসে এত সুন্দর রুপ ধারণ করেছে। আমার মনে হচ্ছিল মাশাল্লাহ কত সুন্দর আমার এদেশ।এর সন্ধান এখনো অনেকেই জানেনা। রোজা ছিল বলে খাওয়ার কোন ঝামেলা নেই। হাসান ভাই আমাদের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন। নৌকা দিয়ে,গাড়ী দিয়ে। শুধু ঘুরছি আর দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি।এখানকার বানরদের কথা না বললেই নয়। গিজগিজ করছে। সেদিন ছিল পূর্ণ চাঁদ।শহরে বসে চাঁদ দেখা আর বনে জংগলে গাছের ফাঁকে, পাতারফাঁকে, ভেসে যাওয়া মেঘের ফাঁকে চাঁদ দেখা এক নয়। পাহাড়ের বর্ষার মতোই পাহাড়ের চাঁদ ও অনেক মনোমুগ্ধকর। মনে হয় তাকিয়ে থাকি যুগযুগ ধরে। মনকে নিয়ে যায় দূরে বহুদূরে। আমি অহল্যার মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার বর্তমানকে।
পরেরদিন ছিল শনিবার। হাসান ভাই বললেন, ভাবি খুব কাছেই উপজাতিদের একটা বাজার বসে।তবে সেখানে খুব সকালে যেতে হয়। আমি বল্লাম আমি যাবই।হাসান ভাই আর আমার বর কেউ রাজি নয় যেতে। কারন সেহরি খেয়ে ঘুমালে আর উঠতে পারবেনা। যাই হোক, আমার বর অবশেষে আমার সংগী হলেন।ভেবেছেন হয়তো একই টাইপের চেহারা। স্বগোত্রীয় ভেবে যদি আবার হারিয়ে যায়।বাজারটা কাপ্তাই বাধের কাছে। চাকমাদের তুলনায় বেশ বড়ো বাজার। গেলাম,দেখলাম চাকমা মহিলারা হরেকরকম পসরা সাজিয়ে বসে আছে। বাজার থেকে অনেক গুলো পাহাড়ি মুরগী, পান,আর বিভিন্ন রকমের সবজি কিনে আনলাম। বলে রাখি, আমাদের ড্রাইভার ও কিন্তু চাকমা।তাই যখনি আমি কিছু কিনি তাকে দিয়েই কথা বলাই।
সব আনন্দকে পেছনে রেখে অবশেষে ফিরে এলাম। ফিরতে তো হবেই।অনেক সুন্দরের মাঝে বেশীক্ষণ থাকতে নেই। তাহলে এই সুন্দর ও সাধারণ হয়ে যায়। আসলে শহরের জীবনে আমি যখন হাপিয়ে উঠি তখন একটু অক্সিজেনের জন্য, একটু বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার জন্য আমি হুটহাট বনে চলে যাই সমস্ত কোলাহলকে পেছনে রেখে।।
মাহিনুর জাহান নিপু
বিভাগ : জীবনযাপন
- শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত
- উপজেলা নির্বাচনে যে কেউ প্রভাব বিস্তার করবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে: নরসিংদীতে ইসি মোঃ আলমগীর
- নিলক্ষায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০
- রায়পুরায় বজ্রপাতে একজন নিহত
- উপজেলা নির্বাচন: নরসিংদী ও পলাশ উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন যারা
- আমদিয়ায় ইউপি মেম্বারকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- নরসিংদীতে ৬ শত পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ
- নরসিংদী প্রেসক্লাবে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
- নরসিংদীর ৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারেন এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়রা
- পথশিশুদের হাত রাঙিয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা
- শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত
- উপজেলা নির্বাচনে যে কেউ প্রভাব বিস্তার করবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে: নরসিংদীতে ইসি মোঃ আলমগীর
- নিলক্ষায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০
- রায়পুরায় বজ্রপাতে একজন নিহত
- উপজেলা নির্বাচন: নরসিংদী ও পলাশ উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন যারা
- আমদিয়ায় ইউপি মেম্বারকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- নরসিংদীতে ৬ শত পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ
- নরসিংদী প্রেসক্লাবে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
- নরসিংদীর ৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারেন এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়রা
- পথশিশুদের হাত রাঙিয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা