বেলাবতে পাল্টাপাল্টি মসজিদ স্থাপন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান, থমথমে অবস্থা

০২ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৩৩ পিএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৫ এএম


বেলাবতে পাল্টাপাল্টি মসজিদ স্থাপন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান, থমথমে অবস্থা

বেলাব প্রতিনিধি:
নরসিংদীর বেলাবতে পাশাপাশি দুটি মসজিদ স্থাপনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মুসুল্লিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে কিছুদিন পরপর সংঘটিত হচ্ছে সংঘর্ষ। এসব সংঘর্ষে আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের নারী পুরুষ সহ ১৫ গ্রামবাসি। একাধিক গ্রাম্য সালিশের পাশাপাশি আদালত ও থানায় উভয় পক্ষ দায়ের করেছেন একাধিক পাল্টাপাল্টি মামলা। প্রতিদিনই এ এলাকায় উক্ত মসজিদ দুটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসি। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলতে থাকা এ সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বিন্নাবাইদ পূর্ব পাড়া গ্রামে এ দ্বন্দ্ব চলছে।

 

স্থানীয়রা জানান, উক্ত গ্রামের প্রায় একশ পঞ্চাশ বছরের পুরাতন একটি মসজিদ ভেঙ্গে পূন:নির্মাণের উদ্যোগ নেন বিন্নাবাইদ গ্রামের মানিক মিয়া নামে এক সৌদী প্রবাসী। কিন্তু পুরাতন মসজিদের জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডভুক্ত বিধায় ও ওয়ারিশ সংক্রান্ত ঝামেলা থাকায় গ্রামের একটি পক্ষ পুরাতন মসজিদটি পূনঃনির্মাণ করতে অনিচ্ছুক। এ কারণে এলাকার হাবিবুর রহমান, তাঁরা মিয়া, বাদল মিয়া সহ উক্ত গ্রামের শতাধিক লোক পুরাতন মসজিদের হতে প্রায় ১০০ ফিট দূরে আরেকটি মসজিদ তৈরী করেন।

অপরদিকে মসজিদের ১১ শতাংশ জায়গা একই গ্রামের মনিরুজ্জামান নামে এক স্কুল শিক্ষকের নামে রেকর্ড করা। তিনি বর্তমানে উক্ত পুরাতন মসজিদ ভেঙ্গে ফেলায় মুসুল্লিদের সুবিধার্থে পাশেই একটি টিনের ছাপড়া মসজিদ তৈরী করেন। এ নিয়ে বাদল গ্রুপ ও মনির মাষ্টার গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঘটছে সংঘর্ষ। গত রমজানের শবে-কদরের রাতে বাদল গ্রুপ মনিরুজ্জামান মাষ্টারের বাড়ির মসজিদে তাদের জায়গা রয়েছে দাবী করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে। এসময় টিনের ছাপড়া মসজিদটি ধারালো দা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে লন্ডভন্ড করে দেয়া হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ নভেম্বর শুক্রবার পুনরায় বাদল গ্রুপ ও মনির মাষ্টারের গ্রুপের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মনির মাষ্টার গ্রুপের আনোয়ার (৪৫), জেসমিন (২৫), বিলকিছ (৩০), ঝুমা (৫) ও উর্মি (১০) নামে ৫ নারী পুরুষ আহত হয়। অন্যদিকে বাদল গ্রুপের তাঁরা মিয়া (৬৫), বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন (২৫), সোহাগ (১৬), আলমগীর (৪০) নামে ৪ জন আহত হয়। উভয় গ্রুপের গুরুতর আহতদের ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল সহ বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা হয়েছে উভয় গ্রুপের পক্ষ থেকে মামলা।

বর্তমানে উক্ত ঘটনায় এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। এলাকাবাসি আশংকা করছেন পুনরায় সংঘটিত হতে পারে এলাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষ। এলাকার সচেতন মহল বলছেন কিছুদিন পরপর নামাজরত অবস্থায় মসজিদে হামলা করা ও মসজিদ ভাংচুর করা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চাই।

বাদল গ্রুপের প্রধান বাদল মিয়া জানান, ১১ শতাংশ জায়গার উপর যে পুরাতন মসজিদটি অবস্থিত। সেটা মনির মাষ্টার নিজের দাবি করলেও সেখানে আমাদের ওয়ারিশ সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মনির মাষ্টার জোরপূর্বক সেখানে মসজিদটি পুননির্মাণ করছে।

মনির মাষ্টার গ্রুপের নজরুল মিয়া জানান, পুরাতন মসজিদের জায়গায় তারা যদি জায়গা পায় তাহলে আমরা সে জায়গা দিয়ে দেব। কিন্তুু বর্তমানে কিছুদিন পরপরই তারা মসজিদ ও আমাদের উপর হামলা করে। তারা দুষ্টু চরিত্রের লোক। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা তাদের অত্যাচার হতে বাঁচতে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তুফা গোলাপ জানান, প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো একটি মসজিদের পাশে আরেকটি পক্ষ নতুন আরেকটি মসজিদ তৈরী করা নিয়ে মূলত এ ঝগড়া। তবে মসজিদ হচ্ছে পবিত্র স্থান আল্লার ঘর। এখানে কোনরকম সংঘর্ষ করা উচিত নয়।

বেলাব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সাফায়েত হোসেন পলাশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় উভয় পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



এই বিভাগের আরও