বেলাবতে ফসলী জমিতে নদ খননের বালু, ব্যাহত হচ্ছে আবাদ

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৩:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৪ এএম


বেলাবতে ফসলী জমিতে নদ খননের বালু, ব্যাহত হচ্ছে আবাদ

বেলাব প্রতিনিধি:

নরসিংদীর বেলাবতে আড়িয়াল খাঁ নদ খননে উত্তোলনকৃত বালু ফসলি জমিতে ফেলার কারণে ব্যাহত হচ্ছে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ। এতে চলতি মৌসুমে আনুমানিক কয়েক’ শ একর ফসলী জমি অনাবাদী পড়ে আছে। ফসলি জমি থেকে দ্রুত বালু সরিয়ে ফসল আবাদের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। 


বেলাব উপজেলার আমলাব, পাটুলি, বেলাব সদর, বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের একাধিক ভুক্তভোগী কৃষক জানান, স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী মহল চলমান আড়িয়াল খাঁ নদ খননে উত্তোলনকৃত বালু নিয়ে কৃষকদের নিকট থেকে অল্প মেয়াদে লীজ নেয়া জমিতে রাখছেন। নদ তীরের এসব ফসলি জমি থেকে যথাসময়ে বালু সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও তারা তা না করে বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এতে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ফসলী জমিতে নদ খননের উত্তোলনকৃত বালু রাখার কারণে চলতি মৌসুমে বেলাব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আনুমানিক কয়েকশ একর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদী রয়ে গেছে। বোরো চাষের আগে আবাদী জমি হতে বালু সরিয়ে না নেওয়ায় কারণে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন অনেকটা কমে আসবে।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যেসব জমিতে বোরো ও অন্যান্য ফসল উৎপাদিত হতো, সেসব আবাদী জমিতে বালু রেখে ব্যবসা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এমন কী জমির মালিকরাও। তারা কৃষকদের নিকট থেকে লীজ নেয়া জমি দখলে রেখে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নদী খননের বালু কিনে ব্যবসা করছেন। এতে জমিগুলো অনাবাদী পড়ে আছে। 
বীরবাঘবের গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম, পাটুলী গ্রামের ধন মিয়া ও ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা মনে করেছিলাম বোরো চাষাবাদের আগেই লিজ দেওয়া জমি হতে বালু সরিয়ে নেয়া হবে। ফলে ফসল আবাদে আমাদের সমস্যা হবে না। সেটা চিন্তাা করেই আমরা জমি লিজ দিয়েছিলাম। কিন্তু জমি হতে বালু সরিয়ে না নেয়ায় বোরো ও অন্যান্য ফসল চাষ করতে পারছি না।


বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদুল এরশাদ বলেন, নদী খননের বালু প্রথমে কোথায় ফেলা হবে, সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন থেকে তালিকা দেয়া হয়। তালিকা অনুযায়ী যে সমস্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠান নদী সংলগ্ন বা বালু দেয়ার মত উপযোগী এবং নদী থেকে ১/২ হাজার ফিট এর নিকটে এগুলোতেই বিনামূল্যে বালু দেয়া হয়েছে। বালু দেয়ার পর ঐখানে বালু রাখার মত কোন জায়গা না থাকায় অতিরিক্ত বালু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সুপারিশ মোতাবেক ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া হয়েছে।


পাটুলী গ্রামের বালু ব্যবসায়ী খোকন ও ফারুক মিয়া, কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আমিন মিয়া ও জাকির হোসেন বলেন, কৃষকের কাছ থেকে আমরা চুক্তিভিত্তিক জমি ভাড়া নিয়েছি। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই এসব জমি হতে বালু অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। তবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারণে আমরা বালু সরিয়ে নিতে পারতেছি না। এমনকি প্রশাসনও এ বালু সরিয়ে নিচ্ছে না। কৃষকের কাছে আমরা এখন অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। 


বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর রউফ খাঁন বনি বলেন, বালু ফেলার কারণে ঠিক কী পরিমান জমি অনাবাদী এমন জরিপ করা হয়নি। তবে জমির পরিমান খুব বেশি না হওয়ায় বালুর কারণে বোরো ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। 


পাটুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইফরানুল হক ভূঁইয়া জামান বলেন, নদ খননের বালু ফসলী জমিতে ফেলার কারণে আবাদ কিছুটা কম হতে পারে। অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে এমন তথ্য থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর খবরদারির কারণে তারা এসব বালু সরিয়ে নিতে পারছে না। আমি উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবো আশা করি এ সমস্যা থাকবে না।


যোগাযোগ করা হলে বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা শরমীন বলেন, নদ খননের বালু বা মাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেয়ার জন্য দেয়া হয়েছে। এখন কৃষকরা যদি কেউ লাভের আশায় নিয়ম না মেনে নদের বালু নিজের জমিতে রেখে জমি অনাবাদী করে রাখেন সে দায় তাদেরই। তবে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।  



এই বিভাগের আরও