নরসিংদীতে তুচ্ছ ঘটনার জেরে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

০৭ মার্চ ২০২২, ১০:০৫ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম


নরসিংদীতে তুচ্ছ ঘটনার জেরে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদী শহরে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে মন্টি দত্ত (৩৪) নামের এক যুবককে চারদফা উপর্যুপরি পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা সময়ের মধ্যে পৃথক দুইটি এলাকায় তাকে এই মারধর করা হয়। পরে রাত ৮টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্মম এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে শহরের বাজির মোড় ও পাতিলবাড়ি রোড এলাকায়। চার দফা মারধরের অভিযোগ উঠছে যার বিরুদ্ধে তার নাম ফকরুল ইসলাম ওরফে হৃদয় (৩৫)। মন্টি ও ফকরুল সবসময়ই একসঙ্গে চলাফেরা করতেন এবং ঘটনার সময় তারা দুজনেই মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিলেন। মারধরে সরাসরি অংশ নিয়েছেন ফকরুলের সহযোগী স্থানীয় ১৫-২০ জন যুবক।

নিহত মন্টি দত্ত নরসিংদী শহরের উত্তর কান্দাপাড়ার পাতিলবাড়ি রোড এলাকার নিরঞ্জন দত্তের ছেলে। একসময় ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করলেও সম্প্রতি তিনি বেকার জীবনযাপন করছিলেন। সমবয়সী একদল বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মিশে তিনি নিয়মিতভাবে মাদক সেবন করতেন। এ নিয়ে স্ত্রী তৃণা দত্ত ও দশ বছরের মেয়ে শ্রেয়া দত্তকে নিয়ে তাঁর সংসারে অশান্তি ছিল। সংসার চলত স্ত্রীর উপার্জনের টাকায়।

নিহত মন্টির পরিবারের সদস্য ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকালে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শাকিল নামের এক যুবকের সঙ্গে মন্টির কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে শাকিল তাকে ওই সময় কয়েকটি চড় মারেন। এতে কষ্ট পেয়ে মন্টি বাজিরমোড় এলাকার পাট্টা (বাংলা মদ বিক্রয় কেন্দ্র) থেকে দিনভর কয়েকদফা মদ খান। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পার্শ্ববর্তী একটি স্ট্রিটফুডের দোকান থেকে কাবাব খাওয়ার সময় এই বিষয় নিয়েই ফকরুল নামের ওই বন্ধুর সঙ্গে তার তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ সময় দুজনই মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিলেন। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নিলে ফকরুল মন্টির পড়নের শার্ট টেনে ছিড়ে ফেলেন। এতে মন্টি প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে ফকরুলকে গালিগালাজ শুরু করেন।

এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উপস্থিত লোকজন তাদের দুজনকে সেখান থেকে দুই দিকে সরিয়ে দিলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ফকরুলকে মারার হুমকি দিতে দিতে মন্টি আবার ওই পাট্টার ভেতরে যান। এর পরপরই ফকরুল তার এক সহযোগীকে নিয়ে মন্টিকে মারধর করেন। পরে তাকে 'মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে' অবস্থায় বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পরে তাকে আবার ধরে নিয়ে গিয়ে আরেকদফা মারধর করা হয়। পরে এলাকায় ফিরে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টের সামনে বসে ছিলেন মন্টি। কাকতালীয়ভাবে ওই রেস্টুরেন্টেই কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে খেতে যান ফকরুল।

তারা আরও জানান, ওই রেস্টুরেন্টে ফকরুলকে দেখতে পেয়ে মন্টি পুনরায় গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়া শুরু করলে তারা তাঁর চুল ধরে টেনে আবার ওই পাট্টার সামনে নিয়ে যান। সেখানে ফকরুলের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী বানিয়াছল এলাকার ১৫-২০ জন লাঠি ও রড দিয়ে তাকে তৃতীয়দফা উপর্যুপরি মারধর করেন। এবারও সেখান থেকে পালিয়ে মন্টি নিজের এলাকা পাতিলবাড়ি রোডে চলে যান। প্রতিশোধ নিতে মন্টি লোক জড়ো করছেন, এমন খবর পেয়ে ফকরুল ও তাঁর সহযোগীরা পাতিলবাড়ি রোডের একটি বালুর মাঠে তাকে একা পেয়ে চতুর্থ দফায় ইচ্ছেমত পেটান। তাদের হাত থেকে কোনরকমে ছাড়া পেয়ে দুই মিনিটের পথ হেঁটে মধ্য কান্দাপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন তিনি।

নিহতের স্ত্রী তৃণা দত্ত জানান, রাত পৌনে ৮টার দিকে খবর পেয়ে আমরা মধ্য কান্দাপাড়া এলাকার অনুকূল ঠাকুরের মন্দির সংলগ্ন স্থান থেকে তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ৮টার দিকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই মাদকাসক্তিই আমাদের পরিবারটাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী জানান, ওই যুবককে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরে তাঁর লাশ রাতেই এই হাসপাতালেরই মর্গে পাঠানো হয়। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক মারধরের চিহ্ন পেয়েছি আমরা। ময়নাতদন্ত করা হবে, পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ জানান, নিহত যুবকের পরিবারের লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া নামের তালিকা ধরে রোববার রাতভর আমরা অভিযান চালিয়েছি। আশা করছি, খুব দ্রুতই তারা আইনের আওতায় আসবেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।



এই বিভাগের আরও