গল্প : জুনে দুজনে’

১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:১৪ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৫ এএম


গল্প : জুনে দুজনে’
ফাহিম ইবনে সারওয়ার প্রেম ভালোবাসার বদৌলতেই মনে হয় এত মানুষের চাপেও ঢাকা বেঁচে আছে। ঢাকা শহরের ভালোবাসারা কেমন? এরা কি প্রকৃতভাবে ভালোবাসতে জানে? ভার্সিটির থার্ড ইয়ারে পড়া মেয়েটা মাসে কয়বার নিউমার্কেট যায়? মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছেলেটা কি নীলক্ষেত থেকে শুধু বিসিএস এর বই কেনে? ওদের ভালোবাসা কোন ধরণের? সরকারি না বেসরকারি? ওদেরও কি চাকরিটা সত্যি সত্যি পেয়ে যাবার অপেক্ষা? এই কথা তো রিকশাওয়ালা জানেনা। সে জানে নীলক্ষেত থেকে টিএসসির ভাড়া ২০টাকা। যখন ক্ষ্যাপ থাকেনা তখন ১৫ টাকাতেও যাওয়া লাগে। পাঁচ বছর আগে ওই ফাইনাল ইয়ারের ছেলেটা আর থার্ড ইয়ারের মেয়েটার মত আরও দুজন ছিল। রিকশাওয়ালার মনে নেই। কিন্তু এই রিকশাতেই ওরা দুইজন নিউমার্কেট থেকে মেয়েটার জন্মদিন পালন করে ফুরফুরে মেজাজে রিকশায় চড়ে ঘুরে বেরিয়েছিল পুরো ক্যাম্পাস। তখন ছিল জুন মাস। রিকশাওয়ালা পাঁচ বছর আগের ওই দুই ছেলেমেয়ের খবর জানেনা। চেহারাও মনে নাই। তারা একসাথে আছে কিনা তাও সে জানেনা। আর আজকে যারা উঠলো তাদের হাতে বই ছিল বেশকিছু। মেয়েটা চেয়েছিল হাঁটতে। ছেলেটা বললো না, বই নিয়ে সে হাঁটতে পারবেনা। মেয়েটার নাম সাবরিনা, ছেলেটার নাম রাফাত আর রিকশাওয়ালার নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। রাফাত চায় একটা সরকারি চাকরি। ব্যাংক তার পছন্দ না। প্রচুর টাকা আছে কিন্তু কষ্টও করতে হবে। রাফাত কষ্ট করতে রাজি না। তাই সে বিসিএস নিয়ে খুব খাটছে। সাবরিনার অবশ্য চাকরি করার খুব একটা ইচ্ছা নেই। তবে করলে সরকারি চাকরিই করতে চায় সে। অন্তত নিরাপত্তা তো আছে। রাফাত আর সাবরিনা প্রেম করছে ছয় মাস। পরিচয় আরও এক বছর আগে থেকে। দুজনেরই অঞ্জন দত্তের গান ভালো লাগে। সাবরিনার আবার আবুল হাসানের কবিতাও ভালো লাগে। নির্মলেন্দু গুণের ফেসবুক ফ্রেন্ড সে। গল্পের প্রয়োজনে বলতে আপত্তি নেই সাবরিনা বেশ সুন্দরী। এরই মধ্যে তার বাসা থেকে পাত্র দেখার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মেয়ে থার্ড ইয়ারে পড়ে। বেশি দেরি করাটা ঠিক হবেনা। তকে এই খবর সাবরিনা এখনো জানে না। রাফাতের বাসায় অবশ্য বিয়ের চাপ নেই। তবে চাকরির জন্য একটা হালকা চাপ আছে। রাফাতের বাবা মোজাম্মেল হোসেন অবসরে গেছেন। ছোট ভাই রাতুল ইন্টারে পড়ছে। মা গৃহিণী। স্বচ্ছলতা আছে। কিন্তু বিলাসিতা নেই। রাফাত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেলে, সেটাই হবে বিলাসিতা। এই ছিল মোটামুটি মে মাসের পরিস্থিতি। জুন আসতেই পরিস্থিতি কেমন বদলে গেল। সাবরিনার মামা একদিন দেখা করতে আসলো হলে। সাবরিনা নিচে নেমে দেখে, মামার সঙ্গে আরেক অপরিচিত লোক। মামা বললো, তার কলিগ। তারপর সাবরিনাকে নিয়ে নিউ মার্কেটে গেল বশির মামা। সাবরিনার ব্যাপারটা খুবই খারাপ লাগলো। চেনাজানা নেই এক লোকের জন্য শার্ট পছন্দ করে দিতে হবে? সাবরিনার আত্মসম্মানে আঘাত লাগলো। বশির মামা তো এটা বুঝেশুনেই করেছেন। এটা ছিল পাত্রী দেখার একটা নতুন ঢং। হলে যাওয়ার পর মায়ের ফোন। মামা গিয়েছিল কিনা? সাথে কেউ ছিল কিনা? সাবরিনা না হয়ে অন্য কেউ হলে বশির মামার ব্যাংকের ওই কলিগের সাথেই হয়তো বিয়েটা হয়ে যেত। কিন্তু কি হলো সাবরিনার কে জানে? মনে হল, সে রাফাতকেই বিয়ে করবে, আর এই জুনেই বিয়ে করবে। খামখেয়ালি হচ্ছে হয়তো, রাফাত তো এখনো কিছু করেনা। কিন্তু এই জুন মাসেই সাবরিনার মনে হলো অন্য কারো সঙ্গে সে থাকতে পারবেনা। রাফাতকে বললো বিয়ের কথা। রাফাত ভয় পেয়ে গেল। বিয়ে? এখনই? সাবরিনা বললো, সমস্যা কোথায়? রাফাত আবার ভয় পেলো। সাবরিনাকে হারানোর ভয়। সেদিন শামস ভাই বিয়ে করলো যুথি আপুকে। শামস ভাই একটা চ্যানেলের সাংবাদিক। সাহস করে বিয়েটা করে ফেললো নাহলে যুথি আপুর বিয়ে হয়ে যেত। সেই বিয়েতে আবার সাক্ষী ছিল রাফাত। আজিমপুরের কাজী অফিসটা চেনে সে। শামস ভাইয়ের কাছে বুদ্ধি চাইলো। ভাই বললো, ‘খালি চিন্তা কর, সাবরিনার সাথে অথবা সাবরিনা ছাড়া, কোনটা তোর জীবন? যেটা মনে হবে সেটাই করবি। একবারই ভাববি। বারবার ভাবলে সিদ্ধান্ত নিতে পারবিনা’। রাফাত বারবার ভাবলো। সারাদিন ভাবলো, সারা রাত ভাবলো। ফলাফলে যেটা হল পরদিন সকাল ১০টায় সাবরিনার হলের সামনে সেই রিকশাওয়ালার রিকশায় অপেক্ষমান অবস্থায় রাফাতকে পাওয়া গেল। এরই মধ্যে সাবরিনাকে ফোন দেয়া হয়েছে। ও আসছে, আর পাঁচ মিনিট।


এই বিভাগের আরও